চোখ ওঠা রোগের কারণ ও প্রতিকার
২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপনের আমাদের সচেতন ও সর্তক খাকা খুবই প্রয়োজন। ফলে নানা রোগ বালাই থেকে বেঁচে থাকা যায়। আমাদের দেহের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো চোখ। চোখের বিভিন্ন রোগের মধ্যে অতি পরিচিতি রোগ হলো চোখ ওঠা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া অথবা কনজাংটিভাইটিস। চোখ ওঠা রোগটি ছোট শিশু হতে বৃদ্ধ বয়সের প্রায় সবারই হয়ে থাকে। এরোগটি অত্যন্ত ছোঁয়াছে এবং অতি দ্রুত ছড়ায়। তাই এ রোগটি দেখা দেওয়া মাত্র খুবই সর্তকতা অবলম্বন করতে হয়। অন্যতায় পরিবার ও আশে-পাশের লোকদের মাঝে এ রোগ ছড়িয়ে যায়।
চোখ ওঠা কীঃ- আমাদের চোখের কোটরের মধ্যে অবস্থিত গোলাকার অংশ হলো অক্ষি গোলক এর সামনে ও পিছনের অংশ খানিকটা চ্যাপ্টা। এই অক্ষি গোলকের বাহিরের আবরণ সাদা, অস্বচ্ছ ¯œায়ু তন্তু দিয়ে শক্ত অংশ হলো শে^তমন্ডল। আর শে^তমন্ডলের সামনের অংশই হলো কর্নিয়া। এই কর্নিয়া ছাড়া সামনের দিকের সবটাই সাদা এর সামনের দিকের অংশটা পর্দা বা ঝিল্লি বা আবরণ দিয়ে ঢাকা থাকে। এর পাতলা পর্দার নামই হলো কনজাংটিভা। এই পর্দা ঝিল্লিটি অত্যন্ত সংবেদনশীল খুব সহজেই তাতে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এই কনজাংটিভায় যখন সংক্রমন বা প্রদাহ হয় তখন এর সুক্ষ্ম রক্তনালী গুলো লালচে হয়ে ওঠে এবং চোখের সাদা অংশটুকু তখন লাল হয়ে যায়। কনজাংটিভার প্রদাহকে বলা হয় কনজাংটিভাইটিস। এই অবস্থাকে বলা হয় চোখ ওঠা।
চোখ ওঠার কারণঃ- চোখ যখন কোন ব্যাকটেরিয়িা বা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়। তখন চোখে এ রোগ দেখা দেয়। তবে বেশী বেশি ভাগ ক্ষেত্রেই চোখ ওঠা রোগ ভাইরাসের আক্রমনেই হয়ে থাকে। তবে চিকিৎসকদের মতে এডেনো ভাইরাস দ্বারা কনজাংটিভা আক্রন্ত হওয়ার কারণেই এ রোগটি বেশি হয়ে থাকে।
কেন হয়ঃ- চোখ ওঠা রোগ আক্রান্ত হওয়ার নানা কারণ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো- * স্যাঁত স্যাঁতে আবহাওয়া ও পরিবেশে বসবাস করা * ঠান্ডা গরমের পরিবেশে বাতাসের প্রবাহের পরিবর্তন এবং বাতাসে জলীয় বাষ্পে বেশি থাকা * আলো বাতাস প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায় না এমন পরিবেশে বসবাস * মলত্যাগের পর ভালো করে হাত পরিষ্কার না করা। তাছাড়া মিজেলস (হোম) রুবেলা, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে চোখ ওঠা রোগ হতে পারে।
লক্ষণঃ- যেহেতু চোখ ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস জীবাণু দ্বরা আক্রান্ত হয়, তাই চোখের রোগের লক্ষণ ও আলাদা আলাদা হয়। ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলে চোখে যে লক্ষণ প্রকাশ পায় তা হলো: * চোখ লাল হয় * চোখের কোণায় পিচুটি বা ময়লা হয়। * সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময় চোখের দুই পাতা একত্রে লাগে থাকা * চোখ আলো সহ্য করতে পারে না * উভয় চোখ সাধারণ আক্রান্ত হয় * চোখে প্রদাহ বা ব্যথা হয় * ঘন হলদেটে বা সাদাটে পুঁজ জমা হয়।
ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে চোখে যে লক্ষণ প্রকাশ পায় তা হলো: * চোখ লাল হয় * চোখ দিয়ে পাতলা পানি পড়ে * চোখ কচ কচ করে * চোখ জ¦ালা পোড়া করে * আলোতে অস্বস্থি লাগে।
এডিনো ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে: * উভয় চোখ আক্রান্ত হয় * চোখে কোন পিচুটি বা ময়লা হয় না * কোন জিনিস দেখতে ঝাপসা দেখা যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে কানের পেছনের লসিকা গ্রন্তি ফুলে যেতে পারে।
এলার্জি জনিত কারণে ও চোখ ওঠতে পারে। দেহের ভিতরে বা বাহিরের কোনো এলার্জির কারণে চোখ ওঠা রোগ দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে দেহের ভিতরে কোনো সংক্রমিত স্থানে স্ট্যাফাইললোকক্বাস ব্যাকটোরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলেও চোখ ওঠা রোগ দেখা দিতে পারে। তখন যে লক্ষণ প্রকাশ পায় তা হলো: * চোখ ভীষণ চুলকায় * চোখ লাল হয় * চোখ দিয়ে পানি পড়ে * নাক দিয়ে পানি পড়ে * চোখের চার পাশে ত্বকগুলো ফুলে যায় * চোখ জ¦ালা পোড়া হয় * ঘন ঘন হাঁচি হয়।
যে ভাবে ছড়ায়ঃ- আক্রান্ত ব্যাক্তির হাতে সরাসরি স্পর্শ, বাতাস, হাত মুখ ধোঁয়া ও অজু গোসলের সময় পুকুর, নদ-নদী বা সুইমিং পুরের মাধ্যমে ও জীবাণু ছড়াতে পারে। তা ছাড়া রোগীর সংস্পর্শে যা কিছিু আসে তা হাতেই এ রোগ ছড়াতে পারে। যেমন: রুমাল, তোয়াল, গামছা, টিস্যু পেপার, খাতা-কলম, বই, চেয়ার ইত্যাদি। চিকিৎসকের ভাষায় এগুলো বলা হয় ফোমাইট।
প্রতিকার: * রোগীর ব্যবহৃত কাপড় ছোাপার, জিনিস পত্র সম্পন্ন আলাদা রাখতে হবে * মানুষের স্পর্শে যাওয়া যাবে না * রোগীর ব্যবহৃত রুমাল বা গামছা বা কাপড়-ছোপড় সাবান দিয়ে ধুয়ে রৌদ্রে শুকাতে হবে অথবা গরম পানিতে ভিজিয়ে পরিষ্কার করতে হবে * রোগীর ব্যবহৃত টিস্যু মাটিতে পুতে ফেলতে হবে * সেবাকারীকে সাবধানতার সাথে সাবান দিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে পরিষ্কার থাকতে হবে * বার বার হাত দিয়ে চোখ স্পর্শ করা যাবে না * রোগীকে কালো চশমা ব্যবহার করতে হবে * রোগীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র বিছানা আলাদা রাখতে হবে * বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলে-মেয়েদের এ রোগ হলে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করতে হবে * এ সময় চোখে কোনো ধরনের কসমেটিক্স ব্যবহার করা যাবে না * কুসুম গরম পানিতে সুতি কাপড় ভিজিয়ে চোখের পাতা পরিষ্কার করতে হবে * রোগীকে অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বিপদের কারণঃ- আমাদের দেশে মানুষের মাঝে এখন ও অনেক কুসংস্কার ও অজ্ঞতা রয়েছে যা মেনে অনেক বিপদের কারণ হতে পারে। অনেকেই চোখ ওঠলে টোটকা চিকিৎসা করান যা বিজ্ঞান সম্মত নয়। এ সময় অনেকেই চোখে গোলাপজল ব্যবহার, শামুকের পানি, তেল, ভাত খাওয়ার হাত ধোয়া পানি, পাতার রস চোখে ব্যবহার করেন। ঝাড়-ফুঁক করান। এসব পরিহার করতে হবে। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
চোখ ভালো রাখতে যা করবেনঃ- * প্রতিদিন রঙিন শাক-সবজি, হলুদ ফলমূল খেতে হবে * নিয়মিত পরিমিত ঘুমাবেন * অবশ্যই বেশি রাত জেগে থাকবেন না * অনিদ্রা চোখের সুস্থতা নষ্ট করে * নিয়মিত বাদাম খাবেন এটি চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারি * ঘরের দরজা, জানালা ও লাইট বন্ধ করে টেলিভিশন দেখবেন না * অনেক সময় ধরে মোবাইল ও ল্যাপটবে বা কম্পিউটারে গেইম খেলবেন না * যারা উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস রোগী তারা অব্যশই বছরে একবার হলেও চোখ পরীক্ষা করান * চোখে কোনো ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করবেন না * তীব্র রোদে বের হওয়ার সময় চোখে সানগ্লাস ব্যবহার করবেন * চোখে ঝাপসা দেখলে ছোট বড় দেখলে কাছে বা দূরে দেখতে সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরার্মশ নিবেন * মাথায় খুশকি থাকলে অব্যশই মাথা খুশকি মুক্ত রাখবেন * কম্পিউটারের কাজ করার সময় মাঝে মাঝে চোখকে বিশ্রাম দিবেন।
সতর্কতা: নিজের চিকিৎসা নিজে করবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ খাবেন না বা চোখে কোন প্রকার ড্রপ ব্যবহার করবেন না। চোখের যে কোন সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
মোঃ জহিরুল আলম শাহীন
শিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কলাম লেখক
ফুলসাইন্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ,
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক
পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা
দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত
জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে
আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি
ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা
সিলেটে মাজিদের ফিফটি
অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন
মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে
সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স
ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না
দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক
সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম
বৈষম্যের শিকার কুমিল্লার ১৫ হাজার এতিম শিশু
দালালচক্রে জিম্মি রোগীরা
ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই সাটুরিয়ার শিশু শিক্ষার্থীদের ভরসা
পঞ্চগড়ে চিকিৎসক পদায়নের দাবিতে সড়ক অবরোধ